যদিও ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন তবু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মেনে চলতে হয়। সমাজ ও ব্যবসায় সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে ব্যবসায়ী ও ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন ও পালন করতে হয়। এ অধ্যায়ে আমরা ব্যবসায়ে নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারব।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শব্দ দুটির ধারণা প্রায় অবিচ্ছেদ্য। যে জ্ঞানবোধ এবং আচরণ সমাজ মূল্যবান ও অনুকরণীয় মনে করে তাকেই মূল্যবোধ বলে অভিহিত করা যায়। মূল্যবোধ ও নৈতিকতাবোধ মানুষকে ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-বেঠিক, ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক, মঙ্গলময় ও কল্যাণময় দিকের নির্দেশনা দেয়। অন্যায় থেকে ন্যায়, অধর্ম থেকে ধর্ম, অসত্য থেকে সত্য, অনুচিত থেকে উচিত পৃথকীকরণ বা নিরূপণের ক্ষমতা নৈতিক নীতিবোধ থেকে আসে। একটি সুন্দর সুখী সমাজ গঠন এবং দেশের জনগণের জন্য নৈতিক আচরণবিধি অনুসরণ একান্ত আবশ্যক।
নৈতিকতা শব্দটি গ্রিক শব্দ ইথস (Ethos) শব্দ হতে উদ্ভব হয়েছে। যার অর্থ মানব আচরণের মানদণ্ড । নৈতিকতা মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের সাথে জড়িত। আমরা জানি একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের সুষ্ঠু পাঠ দান করা। কিন্তু পাঠ দানই শেষ নয়। তাকে দেখতে হবে ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠদান বুঝতে পারছে কিনা। পড়াশুনায় মনোযোগী না অমনোযোগী, বাড়ির কাজ ঠিকমতো করছে কিনা তা দেখা এবং ভূল সংশোধন করে দেওয়া প্রভৃতি কাজগুলো শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শিক্ষকের ন্যায় ছাত্র-ছাত্রীদেরও কিছু নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে যেমন- যথাসময়ে স্কুলে যাওয়া, বাড়ির কাজ করা এবং শিক্ষকের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা ইত্যাদি। নৈতিকতা বলতে মানুষের ভালো মন্দের বিচার-বিশ্লেষণ করে সঠিকটি গ্রহণ করাকে বুঝায়। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন নৈতিকতার অংশ ।
একটি ব্যবসায়ের ধারণা চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে এটি সফলভাবে পরিচালনার সাথে অনেক কাজ জড়িত ৷ এসব কাজ সুন্দর, সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নৈতিকতা দিক-নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। সাথে সাথে ‘ব্যবসায় নৈতিকতা বা নৈতিক মূল্যবোধ' ব্যবসায় জগতে আমাদের আচরণকে সঠিক পথে পরিচালনা করে।
ব্যবসায় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজে জনগণের বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং অন্যান্য দ্রব্যের চাহিদা মিটানোর জন্য একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয় ও চলমান থাকে। একজন ব্যবসায়ী বা ব্যবসায় উদ্যোক্তা জনগণের চাহিদা মোতাবেক পণ্য-দ্রব্য উৎপাদন বা প্রস্তুত করে উৎপাদন খরচের সাথে মুনাফা যোগ করে বা অন্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ক্রয় করে ক্রয়মূল্যের সথে মুনাফার পরিমাণ যোগ করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করে। ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের ব্যবধানই মুনাফা। অতিরিক্ত লাভের আশায় পণ্যের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে বেশি দাম ধার্য করলে তা হবে নৈতিকতার পরিপন্থী। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু নৈতিকতা রয়েছে। যেমন পণ্যের দাম এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে তার লাভ হয় কিন্তু মূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। ব্যবসায়ী এমন পণ্য-দ্রব্য সরবরাহ করবে না যা জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ জনগণ এবং ব্যবসায় উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করেই ব্যবসা পরিচালনা করা বাঞ্ছনীয়। ব্যবসায়ে অন্য নৈতিকতাগুলো হলো—
চলেছে । বাংলাদেশে ব্যবসায় নৈতিকতার প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে সন্তোষজনক নয়। প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টালে ব্যবসায় সংক্রান্ত অনেক নেতিবাচক খবর ও চিত্র চোখে পড়ে । মরা মুরগি কেনা- বেচা, খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল, নিম্নমানের পণ্য তৈরি বা বিক্রয়, ওজনে কম, ফরমালিনযুক্ত মাছ ও ফলমূল, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং খাদ্যে মেশানো, পণ্য দ্রব্যের গুণাগুণ সম্পর্কে মিথ্যা ও অতিরিক্ত তথ্য দান, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের দ্রব্য ব্যবহার, ঔষধে ভেজাল, চলাচলের অযোগ্য যানবাহনের রাস্তায় চলাচল ইত্যাদি ব্যবসায়ে অনৈতিক কার্যকলাপের উদাহরণ । এসব অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়া ভরাবহ। ভেজাল ঔষধ খেয়ে অনেক শিশু মারা গেছে এবং অনেক শিশু অসুস্থ হচ্ছে । ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষ নানা রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এসব অনৈতিক কার্যকলাপ রোধ না করা গেলে রোগাক্রান্ত মানুষদের একটি অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যার ফল হবে ভয়াবহ । নিম্নোক্ত কারণে ব্যবসায়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।
১। সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। অনৈতিক কার্যকলাপ ও অনৈতিক আচরণ মানুষের কাছ থেকে কাম্য নয়।
২। ব্যবসায়ী প্রস্তুতকৃত বা সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে জীবন ধারণ করে। তাদের নৈতিক দায়িত্ব সঠিক পণ্য দ্রব্য বা সেবা সরবরাহ করা।
৩। বর্তমানে ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার প্রতিক্রিয়াও ভয়াবহ। একমাত্র ব্যবসায় নৈতিকতা বোধ এই ভয়াবহ পরিণতি হতে রক্ষা করতে পারে।
৪। ঔষধপত্রে ভেজালের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ঔষধ প্রস্তুতকারকদের নৈতিক আচরণই এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
৫। ব্যবসায় একাটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজের ভালো-মন্দ, কল্যাণ দেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
৬। ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন হলেও সামাজিক দায়িত্ব পালনও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজে অবহেলা বা অনীহা ব্যবসায়ের জন্য মঙ্গলময় নয় ।
৭। ব্যবসার উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য সামাজিক দায়িত্ব পালন অপরিহার্য।
৮। ব্যবসায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে নৈতিকতার ভূমিকা অপরিসীম। নৈতিকতার সাধারণ নীতিমালা অনুসরণ করলে ব্যবসায় সিদ্ধান্তসমূহ সঠিক হবে।
৯। ব্যবসায়ে অনৈতিক কার্যাবলির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হলেও এর পরিণাম কখনও ভালো হয় না । অনেক ব্যবসায় প্রথমে ভালো ফলাফল করেও অনৈতিক কার্যকলাপে নিয়োজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
১০। অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যবসায়ীকে সবাই ঘৃণা করে। সমাজের সম্মান ও শ্রদ্ধা পেতে হলে ব্যবসায় নৈতিক আচরণ বা সত্য পথ অবলম্বনের বিকল্প নেই।
ব্যবসার সামাজিক দায়বদ্ধতা বলতে মুনাফা অর্জনের সাথে সমাজের কিছু মঙ্গলময় বা কল্যাণমূলক কাজ করাকে বুঝায়। প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জনকে ঘিরেই পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণার পরিবর্তন এসেছে। ব্যবসায় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজকে ঘিরেই এর কার্যক্রম। সমাজে বসবাসকারী জনগণের বিভিন্ন ধরনের ভোগ্য পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য বা সেবার চাহিদা নিরূপণ করে তা প্রস্তুত বা সংগ্রহ করে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া ব্যবসার প্রধান কাজগুলোর অন্যতম। তবে সুন্দর জীবন যাপনের জন্য আরও কিছু চাহিদা থাকে যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন প্রভৃতি। ব্যয়বহুল বিধায় জনগণের নাগালের বাইরে এসব কাজ সাধারণত সরকারের দায়িত্ব বলে গণ্য করা হয়। সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান জনহিতকর কাজ যেমন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, স্কুল স্থাপন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ইত্যাদি কাজে এগিয়ে এসেছে। ব্যবসা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের সমর্থনের উপর এর স্থায়িত্ব ও মুনাফা নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যবসায়ের সামাজিক দায়িত্ব পালন একটি নৈতিক দায়িত্ব।
প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যবসায়ী সমাজের একজন সৃজনশীল এবং সচেতন নাগরিক। যে কোনো ব্যবসায়ী একজন সৃজনশীল, চিত্তশীল এবং কর্মক্ষম ব্যক্তি। সমাজের কাছে থেকে যেমন তার কিছু পাওয়ার রয়েছে তেমনি তারও সমাজকে কিছু দেওয়ার রয়েছে। তার অর্জিত মুনাফার কিছু অংশ জনহিতকর কাজে ব্যয় করলে সমাজ যেমন উপকৃত হবে তেমনি তার সম্মানও বাড়বে ।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় জগতে ব্যবসায়ীকে নিজের মুনাফা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য অর্জনের পাশাপাশি অনেক পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এরা হলো রাষ্ট্র, সমাজ, ক্রেতা ও কর্মচারী। এসব পক্ষ কোনো না কোনো ভাবে ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।
রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা ( Responsibility to State): জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে ব্যবসা পরিচালিত হোক এটাই রাষ্ট্রের লক্ষ্য। ব্যবসায় স্থাপন ও অগ্রগতির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জনগণের চাহিদা মেটানো হলে অর্থাৎ পণ্য বা সেবা প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত কর প্রদান করা হলে সরকার খুশি। ব্যবসায়কে রাষ্ট্রের প্রতি নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়—
ক. সরকারকে নিয়মিত কর ও রাজস্ব প্রদান করা।
খ. সরকারের নিয়মনীতি যথাযথভাবে পালন করা।
গ. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা ৷
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ( Responsibility to Society): সমাজ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেই ব্যবসায়ের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটে। তবে ব্যবসায়কে সমাজের প্রতি নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়।
ক. সমাজের প্রয়োজন মাফিক মানসম্মত পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করা ।
খ. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
গ. বিভিন্ন জনহিতকর কাজে সহায়তা করা।
ঘ. জাতীয় দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
ঙ. পরিবেশ দূষণ থেকে এলাকাকে রক্ষা করা।
চ. পণ্যের মজুতদারি না করা ।
ক্রেতা ও ভোক্তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা ( Responsibility to Customer and Consumer ): ক্রেতা ও ভোক্তাদের আস্থা ও সহযোগিতার উপর ব্যবসায়ের সফলতা নির্ভর করে। তাই ব্যবসায়ীকে নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়-
ক. পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা।
খ. মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করা।
গ. পণ্য সামগ্রী প্রাপ্তি সহজতর করা।
ঘ. পণ্য ও বাজারসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা।
শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা (Responsibility to Employees):
শ্রমিক ও কর্মচারীদের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জিত হয়। তাই তাদের স্বার্থকে অবহেলা করে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। ব্যবসায় উন্নতির সাথে তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও বোনাস প্রদান করা এবং তাদের অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা উচিত। একজন ব্যবসায়ীকে তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রতি নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়-
ক. উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও আর্থিক সুবিধা দান।
খ. চাকরির নিরাপত্তা বিধান করা।
গ. কাজের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।
ঘ. প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করা। ঙ. বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
ব্যবসায়ের সামাজিক দায়িত্ব বহুযুগ ধরে অবহেলিত হয়ে আসলেও বর্তমানে দেশে বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান সামাজিক কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল কোম্পানি তাদের সাধারণ ব্যবসায় কার্যক্রমের সাথে বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানি যেমন- টেলিটক, গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, সিটিসেল, এয়ারটেল প্রভৃতি দারিদ্র্য বিমোচন, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার খরচ বহন, বৃত্তি প্রদান ও খেলাধুলার উন্নয়নে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তরুণ সমাজের প্রতিভা অনুসন্ধান ও বিকাশে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়িত্ব পালনের প্রবণতা বেশি দিনের নয়। আশা করা যায়, আমাদের শিল্পোদ্যোক্তা শ্রেণি মুনাফামুখী ব্যবসায় পরিচালনার সাথে সাথে সামাজিক উন্নয়নে সামাজিক দায়িত্ব পালনে আরো এগিয়ে আসবে।
পরিবেশ দূষণ ও ব্যবসায় (Environment Pollution and Business )
ব্যবসা বিশেষ করে শিল্পোন্নয়নের সবচেয়ে বড় সমস্যা পরিবেশ দূষণ। শিল্প বর্জ্য নির্গত তরল পদার্থ নদী- নালায় পড়ে পানি দূষিত করছে। বিষাক্ত পানি মাছসহ জলজ প্রাণী বাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যত্রতত্র ময়লা নিক্ষেপ ও যান বাহনের ধোঁয়া বায়ু দূষিত করে। কারখানার মেশিন ও জেনারেটরের বিকট আওয়াজে ভয়াবহ শব্দ দূষণ হচ্ছে। এছাড়া শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার নামে অবাধে গাছ নিধন ও পাহাড় কেটে পরিবেশকে দূষণ করা হচ্ছে। আবাসনের নামে চাষের জমি হরণ, খাল বিল ভরাট করে আবাসন তৈরি, নদীভাঙ্গন, নির্বিচারে অনুপযুক্ত যানবাহন রাস্তায় চালানো ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। এতে মানুষের স্বাস্থ্যহানি তো হচ্ছেই তদুপরি জীব বৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে ।
দূষণের প্রভাবমুক্ত হতে সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ যথার্থভাবে হচ্ছে না বলে পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলছে। পরিবেশ দূষণের অন্য কারণগুলোর মধ্যে জনগণের অসচেতনতা, যেখানে সেখানে ময়লা নিক্ষেপ ও ত্রুটিপুর্ণ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও দায়ী।
তাছাড়া পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে হলে গণমাধ্যমের সাহায্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের যথার্থ প্রয়োগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতিকরণ এবং পাঠ্যসূচিতে পরিবেশ দূষণ কোর্স অন্তর্ভুক্তি একান্ত আবশ্যক ।
পরিবেশ দূষণরোধে ব্যবসায়ীদের দায়বদ্ধতাঃ
প্রায় প্রতিটি কারখানা থেকে বর্জ্য বের হয়ে থাকে । যেমন-চামড়াজাত শিল্প, কাপড়ের রং ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ক্যামিকেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে । তাই কারখানার বর্জ্য কোনো অবস্থায় প্রবাহমান নদী, খাল-বিল বা জলাশয়ে ফেলা উচিত নয়, সেক্ষেত্রে কারখানার মালিক বা ব্যবসায়ীদের কারখানা প্রতিষ্ঠা এবং চালু অবস্থায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে । এজন্য প্রতিটি কারখানার বর্জ্য শোধনাগার থাকা
বাধ্যতামূলক করতে হবে ।
আরও দেখুন...